কন্যা সন্তান প্রতিপালন সম্পর্কে ইসলাম…


একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী উন্নতি এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছলেও কন্যা শিশুর প্রতি মানুষের ধারণা উন্নত হয়নি। মানুষ শিক্ষিত হয়েছে, সভ্য হয়েছে কিন্তু এই ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষের ধারণার পরিবর্তন হয়নি। এখনও কন্যা সন্তানের জন্মে অনেক বাড়িতেই খুশির রোশনাইয়ের বদলে মন খারাপির মেঘ ছেয়ে যায়! যদিও অবস্থা অনেক বদলেছে তবে সেটা যথেষ্ট নয়। পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে বৈষম্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায়। জন্মের সাথে সাথেই বৈষম্য শুরু হয়ে যায়। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে আত্মীয় স্বজনরা সান্তনা দিতে থাকে, অনেকে মুখ বেজার করে থাকে। পুত্র সন্তানের জন্মে মিষ্টি বিতরণ হয়, কন্যার ক্ষেত্রে সেটা ফালতু খরচ মনে করা হয়!

যাইহোক, একটা সময় আরবে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে বালিতে পুঁতে দেওয়া হতো। এটা ছিল সাধারন ঘটনা। এটাকে খারাপ ভাবে নেওয়া হতো না। সেরকম সময়ে ইসলাম ঘোষণা দেয় এই কাজ জঘন্য এবং হত্যা। কুরআনে বলা হয়, ”তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় (কন্যা সন্তান জন্মের ব্যাপারে), তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট।” [সুরা নাহল/৫৯]। ইসলাম আসার পর এই কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, নারীদের এতটাই অধিকার এবং মর্যাদা দেওয়া হয় যে, কোন এক মনীষী চমৎকার করে বলেছেন, ইসলামের আগে নারীদের মাটিতে পুঁতে দেওয়া হতো আর ইসলাম আসার পরে সেই নারীর পায়ের তলায় জান্নাত করে দেওয়া হলো!

ইসলাম কন্যা সন্তানের জন্মকে বরকতময় বলা হয়েছে। কন্যা সন্তান প্রতিপালন একটা ইবাদত এবং মহৎ কর্ম। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ”যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩]। কন্যা সন্তান প্রতিপালন এমন মহান কাজ যার মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায় এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যদি কন্যার দায়িত্বশীল হয় এরপর তার প্রতি সুন্দর আচরণ করে তাহলে এই কন্যারা তাকে জাহান্নাম থেকে আড়াল করে রাখবে।” [বুখারী ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬২৯, তিরমিযী ১৯১৫, আহমাদ ২৩৫৩৬]

ইসলামে পুত্র এবং কন্যা সন্তানকে সমান ভাবে দেখতে বলা হয়েছে। কাউকে প্রাধান্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর প্রাধান্য দিতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে দেখা যায়, পড়াশোনা, সুযোগ সুবিধা এমনকি খাওয়ারের ক্ষেত্রেও কন্যা সন্তানের উপর পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অথচ ইসলামে বলা হয়েছে, চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে কোন পার্থক্য না করা হয়। একদা, জনৈক আনসারী সাহাবীকে মুহাম্মাদ (সা.) ডাকলেন। ইতিমধ্যে ঐ সাহাবীর এক পুত্র তার কাছে এল। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাও সেখানে উপস্থিত হল। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে মুহাম্মাদ (সা.) বললেন, ‘উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও।’ [মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/১০০]। সামান্য চুমুর ক্ষেত্রেই যদি বৈষম্য করতে নিষেধ করা হয় তাহলে অন্যান্য বড় ব্যাপারগুলো কতটা নিকৃষ্ট ব্যাপার ভাবুন !

Posted in ইসলাম | Tagged , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়


১০০০ বছর আগে, শিক্ষা তখনও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়নি। ঠিক সেই সময় পৃথিবীর বুকে স্থান করে নেয় “আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়”। যা বর্তমান ক্যমব্রিজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও ৩০০-৪০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠা পায় ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে। স্থান ফেজ, মরক্কো।

আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠোপোষক এবং প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফাতিমা ফিহরি নামে একজন মুসলিম নারী। তিনি ছিলেন বিধবা এবং সম্পদশালী। তার সমস্ত সম্পদ ব্যায় করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুটা হয়েছিল একটি মসজিদ হিসেবে যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা দেওয়া হত, সার্টিফিকেইট প্রদান করা হত। এর আগে শিক্ষার জন্য সনদের প্রচলন চালু ছিল না।

ইউনেস্কো এবং গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে।

© Taibah Academy

Posted in ইসলাম | Tagged , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

আসলেই কী ওপারেতে সর্বসুখ !


সেখ ফরিদ আলম

আপনার নিজের জীবনকে নিজের যতই অসহ্য লাগুক। বিরক্তিকর লাগুক। যতই মনে হোক আমার মতো দুঃখী কেউ নেই, আমার মতো কষ্টে কেউ নেই। সত্য কিন্তু এটাই যে আপনার মতো জীবন পাওয়ার জন্য অনেকেই মুখিয়ে আছে। আপনার থেকে অনেক অনেক দুঃখী মানুষ আছে পৃথিবীতে। অনেক মানুষ আছে যাদের কষ্টের পরিমান আপনার থেকে বহুগুণ বেশি। এটাই বাস্তব।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের থেকে যারা ভালো আছে, তাদের এমনভাবে দেখে আর আফসোস করে যে, নিজেদের সুখী ভাবতেই পারে না। সবসময় অন্যদের নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকে। অন্যদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমরা যদি নিজেদের থেকে যারা খারাপ আছে তাদেরকে দেখি তাহলেই নিজেদের অনেক ভালো মনে হবে। জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি আসবে।

আরেকটা ব্যাপার হলো, মানুষ যাদের দেখে আফসোস করছে বা হিংসে করছে, তাদের বাইরে থেকে যেমন দেখা যায় বাস্তবে তেমন নাও হতে পারে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতায় ধ্রুবসত্য – “নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।”

আসলে প্রত্যেক মানুষের চাহিদা আলাদা, প্রত্যেক মানুষের সমস্যা আলাদা, মন মানসিকতা আলাদা। যা পাওয়ার আপনি স্বপ্ন দেখেন, তা পেয়েও অনেকে সন্তুষ্ট নয়। হয়তো আপনি ভাবছেন একটা চাকরি পেলেই দুনিয়ার সব পাওয়া হয়ে যাবে। কিন্তু চাকরি পেয়েও দুঃখ কষ্টে থাকা মানুষের অভাব নেই এই দুনিয়ায়।

এই দুনিয়াটাকে সাজানো হয়েছে এমন করে যে আপনার ভাগ্যে দুঃখ কষ্ট জুটবেই। দুনিয়া একটা জেল খানা। এটা স্বর্গ নয়। দুঃখ, কষ্ট, বিপদ, রোগব্যাধি, প্রিয় মানুষের দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া… এসব একটার পর একটা আসবেই আপনার জীবনে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।” (সূরা আল বাকারাহ ১৫৫)। তাই এই দুনিয়ায় সুখী হওয়ার একমাত্র উপায় হল, নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, পরিস্থিতি মেনে নেওয়া। এবং ভালো কিছুর জন্য, সুখী হওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাওয়া। কারণ, ”…মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে।” [সূরা নাজম ৫৩, আয়াত ৩৯]

আর মানুষ স্বভাবগত ভাবেই এমন যে, কোন কিছুতে সন্তুষ্ট হতে পারে না। সবসময় চাই চাই লেগেই থাকে। মানুষ যত কিছুই অর্জন করুক তারপরেও খুব কম মানুষই সন্তুষ্ট হয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ”আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দু’টি উপত্যকাও যদি দেওয়া হয়, সে তৃতীয়টির আকাঙ্ক্ষা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারবে না।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৭৩)।

সন্তুষ্ট হওয়াটা, নিজের অবস্থা নিয়ে খুশি থাকাটা মানুষের বড় গুণ। আর এটা অর্জন করতে হবে। নিজেদের মন মানসিকতাকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। এজন্যই নবীজী বলেছেন, ”ঐ ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রূযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তাতে সে পরিতুষ্ট হয়েছে।” (মুসলিম হা/১০৫৪, মিশকাত হা/৫১৬৫)।

Posted in ইসলাম | Tagged , , , , | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

|| নিজেকে ভালোবাসুন এবং ক্ষমা করে দিন ||


62b7c4d9-f8d1-4a1f-bbab-0ff219a9856c_1.1b4438d9578c0e3f92d7cca311aed537

© মুইজ বুখারি

আমরা আমাদের অতীত জীবনের দিকে তাকালে এতো বেশি ভুল এতো বেশী পাপ দেখতে পাই যে, নিজেকে ভালোবাসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিজেকে ভালোবাসতে পারা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা হয়তো অনুভব করতে পারছি না। এটি আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর একটি। যে সিদ্ধান্তটি আপনার জীবনের অন্য সব সিদ্ধান্তকে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করবে তা হলো সর্বান্তকরণে নিজেকে গ্রহণ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত।

এটি সরাসরি আপনার সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে, আপনার চাকরি, আপনার অবসর সময়, আপনার ভবিষ্যৎ তথা সমগ্র জীবনকে। আপনি যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারেন তাহলে অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। নিজের মূল্য বুঝতে হলে এবং আত্মবিশ্বাস গড়তে হলে সচেতনতা এবং ভালোবাসার সাথে নিজের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। গ্রহণযোগ্যতা এবং ভালোবাসা নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে।

আরেকটা বিষয় মনে রাখুন, নিজেকে গ্রহণ করে নেয়া এবং ভালোবাসা এটা একবারেই করে ফেলার মত বিষয় না, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তাই নিচে বর্ণিত এই কয়েকটি কাজ দিয়ে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ।

১। এই মুহূর্তে জীবনের যে পর্যায়ে আছেন তাকে গ্রহণ করে নিন। 
এটা আপনার ভাগ্যের অংশ, পেছনে ফিরে গিয়ে এটার পরিবর্তন করতে পারবেন না। এই জীবনের একটা সৌন্দর্যমণ্ডিত ব্যাপার হলো, কোনো কিছুই স্থায়ী নয়, সবকিছুর পরিবর্তন ঘটে।…… অভিযোগ করা, ঘ্যানঘ্যান করা বন্ধ করুন। মনে মনে এই প্রশান্তি রাখুন যে বর্তমানে আপনি যে চ্যালেঞ্জ এবং পরীক্ষায় পতিত আছেন একসময় তার সমাপ্তি ঘটবে।

২। নিজেকে ভালবাসুন এবং ক্ষমা করুন। 
সকল সম্ভাব্য উপায়ে নিজের উত্তরোত্তর উন্নতির চেষ্টা করুন। আপনার নিজের জীবনের যে ভালো দিকগুলো আছে তার দিকে লক্ষ্য করুন এবং আপনি যে নিখুঁত নয় তা মেনে নিন। এটার মানে এই নয় যে, আপনি ত্রুটিগুলো দূর করার চেষ্টা করবেন না। বরং এর মানে হলো আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন, কিন্তু নিজের প্রতি একটু সদয় হয়ে, আরেকটু অমায়িক হয়ে। যদি অতীত জীবনে এমন কোনো অন্যায় করে থাকেন যার ফলে নিজেকে মূল্যহীন মনে হয়, তাহলে নিজেকে ক্ষমা করে দিন।

৩। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ছেড়ে দিন। 
এটা জীবন ধ্বংস করার এক নীরব ঘাতক। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কোন কিছুই পরিবর্তন করতে পারে না, বরং সুচিন্তিত কাজই পারে কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে।

৪। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করুন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। 
আল্লাহ আপনাকে যেমন করে তৈরি করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ হউন। আপনার শক্তি, সামর্থ্য, প্রতিভার দিকে লক্ষ্য করে কৃতজ্ঞ হউন। আমরা যে জীবিত এবং সুস্থ তার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। এভাবে চিন্তা করুন যে, জীবনে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আমাদের পরিপূর্ণ সামর্থ্য আছে।

 

Posted in ইসলাম | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

সুখী বিয়ের উপকরণ: পুরুষদের আত্মউন্নয়নের তিনটি দিক / হালেহ বানানী।


Romantic-love-mood-hearts-wallpaper-cool-photos

এখন পুরুষদের ব্যক্তিগত উন্নয়নকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে–

প্রথমতঃ আত্মসংযম করা।

মৌখিক, মানসিক বা দৈহিকভাবে অভদ্র আচরণ করবেন না। এটা একটা বড় সমস্যা, যেটা নিয়ে অনেক বোন তাদের স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করেন। আমার স্বামী, তার মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না তিনি যখন মেজাজ হারান তখন চিত্কার চেঁচামেচি করেন। এবং আমাকে কষ্টদায়ক কথা বলেন এবং কখনও কখনও দুর্ভাগ্যবশত কিছু ভাইয়েরা এতটাই রাগান্বিত হন যে তারা তাদের স্ত্রীর প্রতি দৈহিকভাবে নির্যাতন করেন। আমার এক ক্লায়েন্ট ছিল যারা নবদম্পতি ছিলেন এবং তারা শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, স্ত্রী তার শ্বশুরবাড়ির উপরে অনেক হতাশ ছিলেন এবং তিনি ক্রমাগত স্বামীকে অভিযোগ করতেন। স্বামী তাকে বলতেন, বন্ধ করো বন্ধ করো এসব কথা। আমি শুনতে চাই না। কিন্তু স্ত্রী ক্রমাগতভাবে স্বামীকে অভিযোগ করতেই থাকলেন এবং পরিশেষে স্বামী এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে তিনি তার স্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত চড় মেরে বসেন। এরপর স্বামী একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি এরকম করেছিলেন, ”আমি কখনোই ভাবিনি আমি আমার স্ত্রীকে আঘাত করবো”। তিনি সেশনেই কাঁদছিলেন। ”সেটা আমি নই, এটা আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর সাথে মেলে না। কিন্তু সে বন্ধ করেনি”। তাই আমাদের আবেগ আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো তা শিখতে হবে। এর কারণ হলো, একবার যদি আপনি কিছু বলে ফেলেন বা খারাপ আচরণ করেন আপনি কখনোই তা ফিরিয়ে নিতে পারবেন না এবং এটা এমন কিছু যা তাদের সম্পর্কটিকে চিরতরে বদলে দিয়েছিলো। যখন সম্পর্কের কোন পর্যায়ে দৈহিক নির্যাতন হয়, যখন আপনি আপনার সাথীকে কোন আক্রমণাত্মক বা কষ্টদায়ক কথা বলেন, আপনার সম্পর্ক আর আগের মত থাকে না। এবং আপনি তা আর ফিরে পাবেন না।

আমার একজন ভাইকে মনে পড়ছে তিনি থেরাপির জন্য এসেছিলেন এবং তিনি আমাকে বলেছিলেন আপনি জানেন, সব আমার দোষ ছিল। আমি তাকে বললাম, আপনি কি রসিকতা করছেন? তিনি বলেন, “এটি সত্যি। সব দোষ আমার ছিল। সে একজন বিস্ময়কর স্ত্রী ছিল। সে একজন চমৎকার মা ছিল। সে সবকিছু করেছে এবং আমি তার স্বীকৃতি দেই নাই। আমি তার প্রশংসা করি নাই আমি তাকে কিছু বলিনি। এখন সে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেছে। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেছে এবং আর এর জন্য আমি শুধু নিজেকেই দোষারোপ করছি।” এবং এটি এত দু:খজনক যে, যেদিন সে ভাই আদালতে গিয়েছিলো … তিনি আমাকে বলেন, আমি আদালতে গিয়ে আমার হাঁটুর উপর বসে পড়ি আমি তার পায়ে চুমু খাই, আমি তাকে বলেছিলাম দয়া করে এটা করো না, আমাদের বিবাহ শেষ করো না। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো।

এখন দ্বিতীয় যে কাজটির মাধ্যমে ভাইয়েরা নিজেদের উন্নত করতে পারেন, তা হলো- নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের করার মাধ্যমে।

আপনাকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা শিখতে হবে। আমি জানি যে আপনাদের অনেকেরই এটা করতে ভাল নাও লাগতে পারে। এটা করতে অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে। এটা করা আপনার ব্যক্তিত্বের অংশ নয়। কিন্তু স্ত্রীকে খুশি করার নিমিত্তে আপনার এটা করা দরকার। এবং আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের নেতিবাচক ব্যবহারগুলিকে অল্প অল্প করে সরিয়ে ফেলতে হবে। যতক্ষণ না আমরা আদর্শ ইসলামিক ব্যক্তিত্বে পরিণত না হই। আমাদের মাঝে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত হবার আকাঙ্ক্ষা থাকা দরকার। আমাদের ব্যক্তিত্ব যেমনি হউক না কেন নিজেদের উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ভাল হতে পারি। এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে মানসিক উন্নতির জন্য ক্রমাগত শিখতে হবে। বিয়ের উপর এমন কিছু কোর্স করতে পারেন। নিজের উন্নতি করা যায় এমন কিছু বই কিনতে পারেন কিভাবে আপনি নিজেকে আরও ভাল বুঝতে পারবেন। হয়তো একসঙ্গে সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক কোন কোর্স করতে পারেন। যেখানে উভয়ের আলোচনার বিষয় একই হবে। এবং আমি জানি আপনারা অনেকেই কর্মক্ষেত্রে এবং পরিবারের যোগান দেয়ার কাজে আটকে আছেন। আপনার যথেষ্ট সময় থাকে না। তাই হয়তো দু’জনে মিলে কোন একটা বই একসাথে পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। হতে পারে একটি অডিও বই, দ্রুত গতিতে ছাড়ুন এটি একসঙ্গে শুনুন। এবং এটা নিয়ে আলোচনা করুন যেন দু’জন একই বিষয়ে কথা বলতে পারেন এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে এবং আবেগের দিক দিয়ে আরও উন্নত হতে পারেন।

শেষ জিনিসটা হলো আমি আপনাকে সুপারিশ করছি যে আপনি আপনার জীবনসাথীর জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠুন।

তো, আপনি আপনার নিজের উপর কাজ করেছেন আপনি আপনার ব্যক্তিত্বের কিছু দিক পরিবর্তিত করেছেন। এবং তারপর খুঁজে বের করুন আপনার জীবনসাথী কী পছন্দ করেন। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির তাদের নিজস্ব পছন্দ এবং অপছন্দ আছে। এতএব খুঁজে বের করুন আপনার কেমন পোশাক আপনার সাথী পছন্দ করেন। তারা কোন কাজ করতে মজা পায়, আপনি কি করলে তিনি ভালবাসা অনুভব করেন। এবং আরেকটি বিষয় যে কোন ধরণের বিরক্তিকর আচরণ বন্ধ করুন। যখন কোনো দম্পতি আমার কাছে আসেন, আমি প্রথমে তাদের যা বলি তা হলো বিরক্তিকর আচরণ বন্ধ করুন। কারণ হয়তো আপনি না জেনেই বিরক্তিকর আচরণ করছেন, যা কিনা আসলেই আপনার জীবনসাথীর মন খারাপ করছে। আর যতবারই আপনি এটা করেন ততবারই সে মনে ভীষণ কষ্ট পায়। এতএব আপনার নেতিবাচক আচরণগুলি বন্ধ করতে হবে সর্বপ্রথমে। এবং তারপর প্রেমময় আচরণ আরম্ভ করুন। এমন কাজ করুন যেন আপনার জীবনসাথী ভালবাসা অনুভব করতে পারেন। তিনি যথাযথভাবে সমাদৃত হয়েছেন অনুভব করতে পারেন তাকে বুঝতে দিন তিনি আপনার এক নম্বর প্রাধান্য। আপনার সাথী যদি অনুভব করেন যে আপনার কাছে তিনি অগ্রাধিকার পান তাহলে তিনি খুব সুখী হবেন। সুতরাং সাধ্যমত চেষ্টা করুন এই জিনিসগুলি প্রয়োগ করুন। আপনার নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনুন সর্বপ্রথমে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” সুতরাং বৈবাহিক সম্পর্কে পরিবর্তন আনার আগে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনুন। ইন’শা’আল্লাহ।

Posted in ইসলাম | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

সুখী বিয়ের উপকরণ: নারীদের আত্মউন্নয়নের তিনটি দিক / হালেহ বানানী


100-romantic-ways-to-show-your-love-on-valentine-s-day
আমি গত বিশ বছর ধরে থেরাপি করি। আমি লক্ষ্য করেছি যে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বোনদের মধ্যে আছে যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং সমানভাবে নির্দিষ্ট কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভাইদের মধ্যে আছে যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। নারীদের আত্ম উন্নতির বিষয়গুলোকে আমি তিনটি ভাগে ভাগ করে সংক্ষেপে তুলে ধরবো।

প্রথমটা হলো মানসিক স্থিতিশীলতা।

আপনার আবেগকে কন্ট্রোল করবেন, পাজি ড্রামাকুইন না হওয়া, বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখানো, কান্নাকাটি না করা, বেশি চিৎকার চেঁচামেচি না করা। এর কারণ হলো ভাইরা তাদের স্ত্রীদের সম্পর্কে এইসব ব্যাপার নিয়েই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন। তারা মনে করেন যে তারা একটি ডিমের খোসার উপর রয়েছেন। তারা মনে করেন যে তারা এমন একটি টাইম বোমার সঙ্গে আটকে রয়েছেন তারা জানেন না কি তাকে বিস্ফোরিত করবে। এবং তাই এটা অনেকটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে এবং রিলেশনশিপের মাঝে অনাস্থা তৈরি করে। যেখানে স্বামী জানেন না কি তার স্ত্রীকে বিস্ফোরিত করবে। এবং তাই এরকম মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যেখানে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় জিনিসটা হচ্ছে নিরাপদ থাকা। (নিজেকে নিরাপদ মনে করা)।

আমি দেখেছি নারীরা তাদের সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এটা হতে পারে তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে, তাদের শ্বশুরালয়ের আত্মীয় স্বজনের ক্ষেত্রে, অথবা বন্ধু/বান্ধবের সাথে। এবং সেখানে সে একটি ভয়ভীতি বা অন্যদের সম্পর্কে অনিরাপদ বোধ করেন। তিনি অন্যদের কারণে হুমকির সম্মুখীন বোধ করেন বিশেষ করে অন্য নারী দ্বারা। তাই আমরা আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে পারি। আমরা যদি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে সত্যিই ভাল বোধ করি তখন আমরা আমাদের সম্পর্কগুলোতে অন্য নারীদের দ্বারা প্রভাবিত হবো না। এবং নিঃসন্দেহে এতে আমাদের বিবাহ আরও ভালো হবে, বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও ভালো হবে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়তার সম্পর্ক আরও ভালো হবে।

তৃতীয় জিনিসটা হলো জ্ঞান বাড়ানো।

অনেক বোনরাই মাশাআল্লাহ অত্যন্ত শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমতী। এখন কি ঘটে যে, একবার যখন তাদের বিয়ে হয়ে যায় তারা ঘরের ভেতরে থাকতে পছন্দ করেন। বাচ্চাদের এবং বাড়ির যত্ন নিতে পছন্দ করেন যা সম্পূর্ণরূপে প্রশংসনীয় এবং সম্মানিত মাশাআল্লাহ। কিন্তু যা ঘটে যে তখন তারা তাদের মেধা বিকাশে সময় এবং মনোযোগ দেয়া বন্ধ করে দেন। তাই যা ঘটছে যে ভাইয়েরা কাজে যাচ্ছেন তারা তাদের উত্কৃষ্টতর শিক্ষা নিচ্ছেন তারা অগ্রসর হচ্ছেন যখন বোনরা অনুরূপ কাজ করতে পারেন না। তারা স্থবির হয়ে পড়েন এবং তারা তাদের সময় উৎসর্গ করছেন, কোরবানি করছেন পরিবারের জন্য। তারা সবকিছু ঠিকঠাক রাখছেন, তারা এত কিছু করছেন মাশাআল্লাহ। কিন্তু তারা তাদের মেধা বিকাশে ততটা সময় দিচ্ছেন না। এবং আমি মনে বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য নিয়মিত পড়তে হবে, দুনিয়ার খবর রাখা, কি ঘটনা ঘটছে জানা। জ্ঞান বাড়ানো ক্রমাগত অব্যাহত রাখা। এতে আপনার সাথীর সাথে আপনার আর দূরত্ব তৈরি হবে না।

আমার একজন মহিলা ক্লায়েন্ট ছিলেন যার স্বামী একজন চিকিৎসক ছিলেন মাশাআল্লাহ। আর তার স্বামী ক্যারিয়ারে মেধা বিকাশের মাধ্যমে ক্রমাগত অনেক অগ্রগতি করছিলেন। কিন্তু তিনি (স্ত্রী) যেহেতু বাড়িতে থাকতেন আর তিনিও খুব বুদ্ধিমান ছিলেন, খুব শিক্ষিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বাড়ীতে তার বাচ্চাদের দেখভাল তদারকির করায় এত বেশি ব্যস্ত ছিলেন যে তাদের মাঝে ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু করল। তাদের আলাপ আলোচনাগুলি আর আগের মত জমে উঠত না। এবং আমি মনে করি এটা ক্রিটিক্যাল যে জ্ঞান বাড়ানোর উদ্দীপনা অব্যাহত রাখার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

Posted in ইসলাম | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

গল্পগুলো অন্যরকম – ০১ / আরিফ আজাদ


1f0f2559e2575f71a8e757bb1b7569b5

সূর্যের সোনালী আভা বিধৌত ঝলমলে এক ভোর। ইসলামের একেবারে প্রথম দিককার সময়। নবুয়াত লাভ করে আস্তে আস্তে তাওহ্বীদের বাণী মানুষের কাছে প্রচার করছে এক যুবক। যুবকটির নাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ।
তবে, মক্কা উপত্যকার সকল অধিবাসীদের কাছে এই যুবক অন্য একটি নামে পরিচিত। আল-আমীন। আল-আমীন অর্থ বিশ্বস্ত। তখন মাত্র গুটিকয়েক লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে শামিল হয়েছে। ডর ভয়হীন যুবকটা এই অল্প কয়েকজনকে নিয়েই রোজ বের হয় দাওয়াতের কাজে। লোকজনকে বলতো,- ‘শুনুন! আপনারা যার উপাসনা করছেন, তাদের আদতে কিচ্ছু করার ক্ষমতা নেই। এরা না নিজেরা কিছু শুনে, না কিছু বুঝে। দয়া করে আমার কথা শুনুন। আমার উপর বিশ্বজাহানের র’বের পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ নাযিল হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি, আপনাদের উপাস্য দেবতারা পাথরের মূর্তি বৈ কিচ্ছু নয়। একমাত্র ইলাহ তো আল্লাহ। আপনারা এসব উপাসনা ছেড়ে সেই মহান সত্ত্বার ইবাদাত করুন। তিনি এক, অদ্বিতীয়…….’

সবাই তাঁর কথা শুনে খুব মজা পেলো। বলতে লাগলো,- ‘বলে কী ছোকরা! সেই যুগের পর যুগ ধরে আমরা যাদের উপাসনা করে আসছি তারা নাকি সত্য ইলাহ নয়। আর এই ছেলে এসে বলছে কীনা তার উপরে সত্য প্রত্যাদেশ নাযিল হয়েছে। দু’দিনের বৈরাগী, ভাতেরে কয় অন্ন…..’

সবাই ভাবলো ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দিন দিন যখন এই ছেলেটার দল ভারি হতে লাগলো, মক্কাবাসীর কপালের ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে শুরু করলো। এই ছেলেটাকে তো এভাবে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কী করা যায় তাহলে? 
নষ্ট সমাজের একটি চিরাচরিত নিয়ম হচ্ছে, যখন কেউ ‘শুদ্ধ’ হবার কথা বলে, নষ্টের দল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়। 
যুবকটার কপালেও এরকম অনেকগুলো অপবাদ জুটে বসলো। তাকে বলা হলো কবি, উন্মাদ, পাগল, যাদুকর ইত্যাদি। 
কিন্তু, এই ছেলে তো থামার নয়। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, আর এই ছেলের দল ভারি থেকে আরো ভারি হতে থাকে।।

মক্কা তখনও কুরাইশদের দখলে। তখনও ক্বাবা শরীফকে ঘিরে কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতো মুশরিকরা। 
পবিত্র ক্বাবা ঘরের চাবি জমা ছিলো এক লোকের কাছে। লোকটা মুশরিক। নাম উসমান ইবনে তালহা।
এক সকালে, মুহাম্মদ (সাঃ) কিছু সাহাবীদের নিয়ে ক্বাবা প্রাঙ্গনে এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু, ক্বাবা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ।
মুহাম্মদ (সাঃ) উসমান ইবনে তালহাকে বললেন,- ‘আমাকে ক্বা’বার চাবি দিন। আমি ভিতরে ঢুকবো….’
উসমান ইবনে তালহা অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,- ‘তোমাকে চাবি দিবো মানে? তুমি না তোমার পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছো? তুমিই তো সেই যে এই ক্বা’বার ইলাহকে (ক্বাবার মধ্যে তখন যেসকল মূর্তি ছিলো তাদের উদ্দেশ্য করে) মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছো। তোমাকে কখনোই চাবি দিবো না আমি। চলে যাও এখান থেকে….’

মুহাম্মদ (সাঃ) শান্ত গলায় বললেন,- ‘শুনুন! আজকে আমায় চাবি দিচ্ছেন না তো? ঠিক আছে। আজকে আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু একদিন আপনার হাতের ওই চাবি আমার হাতে থাকবে। আর সেদিন আমি যাকে ইচ্ছা এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে দেবো…..’

মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা শুনে উসমান ইবনে তালহা আবারো রেগে গেলেন। বললেন,- ‘শোন মুহাম্মদ, সেদিনটা কখনোই আসবে না। যদি আসেও, সেদিন কোন কুরাইশই অবশিষ্ট থাকবে না।’

মুহাম্মদ (সাঃ) হাসলেন। বললেন,- ‘সে দিনটা অবশ্যই আসবে, এবং কুরাইশরাও বর্তমান থাকবে। সেদিন কুরাইশদের বরং সম্মানিত (ইসলামের মাধ্যমে) করা হবে।’

এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। যেদিন মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা বিজয় করেন, সেদিন ক্বা’বা চত্ত্বরে এসে তিনি ক্বা’বা শরীফের চাবি খুঁজতে লাগলেন। বলা হলো,- ‘এই চাবির সংরক্ষক উসমান ইবনে তালহা।’
মুহাম্মদ (সাঃ) হজরত আলী (রাঃ) কে বললেন উসমান ইবনে তালহার কাছ থেকে চাবি নিয়ে আসতে। আলী (রাঃ) উনার কাছে গিয়ে চাবি চাইলেন। কিন্তু উসমান ইবনে তালহা নিজ সিদ্ধান্তে অনড়। যেন- মক্কা বিজয় করেছে তো কি হয়েছে। প্রাণ থাকতে এই চাবি আমি মুহাম্মদের হাতে দিবো না।
আলী (রাঃ) কয়েকবার বলার পরেও যখন চাবি পেলেন না, তখন জোর করে উসমান ইবনে তালহার হাত থেকে চাবি নিয়ে আসেন। এনে মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতে দেন। মুহাম্মদ (সাঃ) ক্বা’বা শরীফের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। ঢুকে সালাত আদায় করলেন। 
তখন, মক্কায় যারা হজ্ব করতে আসতো, তাদের পানি পান করাতো রাসূল (সঃ) এর চাচা আব্বাস (রাঃ)। তিনি বললেন,- ‘হে রাসূল (সাঃ), আপনি কী আজ থেকে মক্কার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্বটা আমাকে দিবেন? তাহলে হাজ্বীদের পানি পান করানোর পাশাপাশি আমরা আরো একটি মহান দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য লাভ করতে পারতাম।’

ঠিক সেই মূহুর্তে জিবরাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে আসলেন। নাযিল হলো সূরা আন-নিসা’র ৫৮ নম্বর আয়াত।

‘Allah commands you to deliver trusts to those worthy of them; and when you judge between people, to judge with justice’

‘(হে রাসূল) আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানতসমূহ হক্বদারের কাছে ফিরিয়ে দিতে, এবং যখন আপনি লোকদের বিচার করেন, তখন অবশ্যই তাদের সাথে ন্যায় বিচার করবেন….’

এই আয়াত নাযিল হয় ক্বা’বা শরীফের চাবি কেন্দ্রিক ঘটনাকে নিয়ে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন,- ‘আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে আজকের (অর্থাৎ সেদিনের) আগে আর কখনোই এই আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনিনি।

এই আয়াতে হক্বদারের কাছে তার আমানত ফেরত দেওয়ার কথা আছে। সে অবস্থায়, উসমান ইবনে তালহা’ই ছিলেন এই চাবির হক্বদার। তাই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আব্বাস (রাঃ) কে সেদিন ক্বা’বার চাবি দেন নি। হজরত আলী (রাঃ) কে বললেন উসমান ইবনে তালহাকে চাবি ফিরিয়ে দিয়ে আসতে।

আলী (রাঃ) উসমান ইবনে তালহার কাছে এসে কাঁচুমাচু করে বললেন,- ‘মাফ করে দাও আমাকে। তোমার হাত থেকে জোর করে আমি চাবি ছিনিয়ে নিয়েছি। এই নাও তোমার চাবি।’

উসমান ইবনে তালহা বিস্মিত হলেন। বুঝতে পারছিলেন না ঘটনা কী। তখন আলী (রাঃ) তৎক্ষণাৎ নাযিল হওয়া আয়াতটি তিলাওয়াত করে শুনালেন উসমান ইবনে তালহাকে।
উসমান ইবনে তালহা এই আয়াতের অর্থ বুঝতে পারলেন খুব ভালো করেই। এরকম উদারতা, ন্যায়বিচার, এবং অন্যের আমানতের প্রতি ইসলামের গুরুত্বারোপ দেখে তিনি বিমুগ্ধ হলেন।
সাথে সাথে তিনি ঘোষণা করলেন,-

‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ…..’

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত রাসূল।’

সেদিনই উসমান ইবনে তালহা (রাঃ) ইসলামের সুশীতল ছায়ায় শামিল হোন। এবং, এখন পর্যন্ত পবিত্র ক্বা’বা শরীফের চাবি সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন হজরত উসমান ইবনে তালহা (রাঃ) এর বংশধরগন।

Posted in অধিকারীর অধিকার, ইসলাম, গল্প নয় সত্যিই | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

ভালো কাজের সংজ্ঞা – উস্তাদ নোমান আলী খান


dsc_1262

ভালো কাজের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করবে? এই পৃথিবীতে দুই ধরনের ভাল কাজ আছে। এটা একটু মনে রাখবেন। দুই ধরনের ভাল কাজ আছে। নৈতিক ভাল কাজ। আমি প্রতিবেশীর প্রতি ভাল। আমি কর্মক্ষেত্রে সৎ। আমি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করি। আমি চুরি করি না। আমি মানুষকে ঠকাই না। এগুলো হচ্ছে নৈতিক ভাল কাজ। ঠিক আছে? এরপর আছে হলো ধর্মীয় ভাল কাজ। আমি হজ্জে যাই। আমি যাকাত দেই। আমি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমি রামাদানে রোজা রাখি। এগুলো নৈতিক অর্থে ভালো কাজ না, এগুলো ধর্মীয় অর্থে ভালো কাজ। অনেক সময় মুসলিমরা এবং নন-মুসলিমরা, বিশেষ করে মুসলিমরা, আমরা এই দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করে ফেলি। মুসলিম বিশ্বে আপনি এমন মানুষ খুঁজে পাবেন যারা নৈতিকভাবে ভালো। তারা তাদের পরিবারের সাথে ভালো। তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়। তারা তাদের বাড়িতে দায়িত্বশীল। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো। কর্মক্ষেত্রে তারা সৎ। ভাল মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে ধর্ম বলতে কিছু নেই। “ভাল হওয়ার জন্য আমার ধর্ম লাগে না”, তারা বলে। অপর মেরুতে আছে এমন মানুষ যারা নামাজ পড়ে, হজ্জে যায়। যাকাত দেয়। লম্বা দাড়ি আছে। খুব ধার্মিক পোশাক পরে। কিন্তু তারপরও তারা তাদের পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ব্যবসায় মানুষকে ধোঁকা দেয়। অত্যন্ত অনৈতিক মানুষ। তো আমরা ভাল হওয়ার দুইটি মাত্রাকে আলাদা করে ফেলেছি। যা হলো নৈতিকতা এবং ধার্মিকতা।

আল্লাহ কুরআনে এই দুটিকে একসঙ্গে করে ফেলেন একটি আয়াতে, যেটাকে বলা হয় আয়াতুল বির। সদগুণের আয়াত। ভাল হওয়ার অর্থ কি ? আপনি যদি এই আয়াতটি নিয়ে পড়েন। তাহলে দেখবেন এটা দুটি জিনিসের সমাহার। এটা হল একটি সমন্বয় নৈতিক নীতির, যেমন কথা রাখা, ধৈর্যশীল হওয়া ইত্যাদি এবং ধর্মীয় নীতির, যেমন নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেওয়া। এটা এক জায়গায় এই দুটো জিনিসের সমন্বয়। তো আপনি যদি মনে করেন ভাল হওয়ার সংজ্ঞা আপনি নিজে ব্যাখ্যা করবেন। সম্ভবত আপনি শুধু নৈতিক ভাল কাজের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করছেন। এবং আপনি ধার্মিক ভাল কাজগুলোকে উপেক্ষা করছেন, যেমন যে ধর্মানুষ্ঠানের কাজগুলো আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন। (নামাজ, হাজ্জ, রোজা ইত্যাদি) কিন্তু আল্লাহ চান যে আমাদের মধ্যে এই দুটি গুণ (নৈতিক এবং ধর্মীয়) একসাথে থাকুক। আর তখনি একজন মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে একজন ভাল মানুষ। নয়তো আপনি আসলে ভাল নয়, কারণ আপনি নিজের থেকে ভাল হওয়ার সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করছেন এবং আপনি আল্লাহর সংজ্ঞাকে উপেক্ষা করছেন। আমরা আল্লাহর কাছে নির্দেশনা প্রত্যাশা করি কারণ আমরা নিজেরা সবকিছুর সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করতে পারি না এবং আমরা চাই উনি যেন আমাদের ব্যাখ্যা করে সাহায্য করেন।

আয়াতুল বির এর বাংলা অনুবাদঃ
”সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।”
[সূরা বাকারাঃ ১৭৭]

Posted in ইসলাম, সদ্ভাব ও সদ্ব্যবহার | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন?


এটা কিভাবে সম্ভব যে, পৃথিবীতে এতগুলো ধর্ম থাকা সত্ত্বেও মাত্র একটি ধর্মই সত্য? বাকি গুলো তবে কি? সবই কি মিথ্যা আর বানোয়াটি? ওই সব ধর্মের মহান ধর্মপ্রচারকরা কি তবে ভন্ড? তারা কি তবে ইশ্বরের দূত নয়? যদি তাই হয়ে থাকে তবে সেই একটি ধর্ম এবং ধর্মগুরু ছাড়াও বাকি গুলো এত জনপ্রিয়তা বা বিস্তৃতি লাভ করল কিভাবে?

এসব প্রশ্ন অনেক মানুষের মনেই জাগে। এটা স্বাভাবিক। এসবের উত্তর না জানার কারনে অনেকে সত্য থেকে দূরে থাকেন। অথবা সত্যকে জানার উতসাহ হারিয়ে ফেলেন। ইসলাম মুহাম্মাদ (সা.) -এর পূর্বের কোন ধর্মকেই সরাসরি সৃষ্টিকর্তার ধর্ম নয়, বলেনা। সেগুলো আল্লাহর দ্বীন এক সময় হলেও হতে পারে। ইসলাম বলে পৃথিবীতে এক লক্ষ্য চব্বিশ হাজার নবী বা ইশ্বরের দূত এসেছেন। মহান আল্লাহই তাঁদের নবী করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভু খন্ড, সম্প্রদায় বা ভাষাভাষির লোকের কাছে নবী এসেছে। তাদের কাছে ধর্মের বাণী প্রচার করেছে। ইহুদি ধর্ম এক সময় আল্লাহর ধর্ম ছিল। খ্রিস্টান ধর্মও ছিল আল্লাহর মনোনীত দ্বীন। মুশা/মোজেস এবং ঈশা/যীষু (তাঁদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) আল্লাহর সন্মানিত নবী ছিলেন। কিন্তু মানুষ সময়ের সাথে তাঁদের বাতলে দেওয়া ধর্মকে পালটে ফেলেছে।

যখন এক নবীর বাতলে দেওয়া ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থাকে মানুষ পালটে ফেলে, বদলে দেয়। এক আল্লাহর ইবাদত না করে যখন শিরক করা শুরু করে তখন আল্লাহ আবার নবী পাঠান। এভাবেই এত নবী এসেছেন দুনিয়ায়। যখন মুশার (আ) ধর্মকে ইহুদিরা বদলে ফেলল তখন আল্লাহ যীষুকে (আ) পাঠালেন। কিন্তু কিছু লোক তাকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করল আবার কিছু লোক তাঁর বিরোধীতা করে শত্রুতা শুরু করল। ঠিক একই ব্যাপার হয় মুহাম্মাদ (সা.) এবং অন্যান্য নবীদের সময়েও। ঠিক এই কারনেই পৃথিবীতে এত ধর্ম।

এবার কথা হল, যদি বিখ্যাত সব ধর্ম এবং ধর্মগুরু আল্লাহর মনোনীত হয় তবে কেন ইসলাম মেনে চলতে হবে? উত্তরটা খুব সহজ। বাকি ধর্ম গুলো আর খাঁটি নেই। মানে বদলে গেছে, বিকৃত হয়েগেছে, পরিবর্তিত হয়েগেছে। আর একথা শুধু আমরা বলছিনা। পৃথিবীর তাবর তাবর ঐতিহাসিক, বিষেশজ্ঞরা বলেন। যেমন বিবেকানন্দ বলেছেন বেদের ৯০% পরিবর্তিত হয়েগেছে। আর কুর’আন যখন নাজীল হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে তা লিখে ফেলা হত। তাই হাজার বছর আগের চামড়ায় লেখা কুর’আন, আমেরিকার কংগ্রেস লাইব্রেরির কুরান, ইস্তাম্বুলের মিউজিয়ামের কুরান কিংবা আপনার বাড়ির পাশের বইয়ের দোকানের কুরানের মধ্যে কোন তফাত নেই। অথচ বাজারে প্রায় ৬৬ রকমের আলাদা আলাদা বাইবেল পাওয়া যায়।

আরেকটা প্রশ্ন মনে জাগতে পারে, মুহাম্মাদের (সা) পর আর কোন নবী আসবেনা কি? উত্তর হল হ্যাঁ আসবেন। তবে তিনি আসবেন মুহাম্মাদের (সা.) অনুসারী হয়েই। তিনি নতুন কিছু প্রচার করবেন না। ইসলামের কথায় প্রচার করবেন। তিনি হলেন যীষু (আ)। তাঁর অনুসারীরা বাড়াবাড়ি করে তাঁকে আল্লাহর নবী থেকে আল্লাহর সন্তান বানিয়ে ফেলেছেন। সেই মিথ্যাচার দূর করবেন তিনি।

Posted in অমুসলিমদের চোখে ইসলাম, ইসলাম ও অনান্য ধর্ম | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না


একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেনা। এমনকি নিজের দুশমনের সাথেও না। মুসলিম হবে ইনসাফকারী। কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের কারনে সে সুবিচার বর্জন করবেনা। বদলা নেওয়ার রাগেও সে কারও প্রতি অন্যায় করবেনা। একটা ঘটনা শুনুন। ইবনে হিশাম, সিরাতুর রাসুল (সা.) ইত্যাদি সিরাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আমি সংক্ষেপে বলছি –

মক্কার কাফেররা ষড়যন্ত্র করে কয়েকজন লোক পাঠায় মদিনায় মুহাম্মাদ (সা.) -এর কাছে। তারা মিথ্যা করে বলে, ‘আমাদের গোত্রে ইসলামের কিছু চর্চা আছে, দ্বীন শিক্ষা ও কুর’আন পড়ানোর জন্য কিছু জ্ঞানসম্পন্ন সাহাবীদের পাঠালে আমরা উপকৃত হবো।’ রাসুল (সা.) তাদের কথায় বিশ্বাস করে, দশ জনের একটি মুবাল্লিগ দল প্রেরণ করেন। কিন্তু কিছুদুর যেতেই তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে প্রায় একশজন কাফের তীরন্দাজ। বিশ্বাসঘাতকতা করে মেরে ফেলা হয় আট জন সাহাবীকে। দুজন বেঁচে যান। তাঁরা হলেন, খোবায়েব বিন আদী (রা.) এবং যায়েদ বিন দাসেনাহ (রা.)। এই দুজনকে মক্কায় এনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এদের কেনেন দুইজন কাফের শুধুই হত্যা করার জন্য। বদর যুদ্ধে পিতৃহত্যার অন্যায়ভাবে বদলা নেওয়ার জন্য।

হত্যা করার আগে খোবায়েব (রা.) -কে হারেশ বিন আমেরের বাড়ীতে কয়েকদিন বন্দি করে রাখা হয়। এসময় তাকে খাবার দেওয়া হতনা। এমনকি জলও না। একদিন হঠাত, হারেসের ছোট বাচ্চা ছেলেটি ধারালো ছুরি নিয়ে খেলতে খেলতে খোবায়েব (রা.) -এর কাছে চলে আসে। তিনি শিশুটিকে আদর করে কোলে বসান। এই দৃশ্য দেখে বাচ্চাটির মা ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। (তিনি ভেবেছিলেন খোবায়েব (রা.) হয়ত বাচ্চাটির কোন ক্ষতি করবে বা মেরে ফেলবে বদলা নেওয়ার জন্য কারণ তাঁর মৃত্যু তো নিশ্চিত!)। তখন খোবায়েব (রা.) বলেন, ‘মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না’।

*** খোবায়েব (রা.) -কে বিশ্বাসঘাতকতা করে ধরে আনা হয়, তাঁর সাথীদের হত্যা করা হয়, অন্যায়ভাবে তাঁকে বিক্রি করা হয়, কিছুদিনের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হবে এতসব জানা সত্তেও তিনি নিজ শত্রুর বাচ্চা শিশুকে আদর করে কোলে বসান এবং কাছে ধারালো ছুরি পেয়েও বাচ্চাটিকে হত্যা করেননি বা পরিবারের অন্য কাউকেও মারেননি। বাচ্চাটির মা ভয় পেলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেনা। অর্থাৎ বুঝিয়ে দেন নিশ্চিন্ত হও, তোমার শিশুর কিছু হবেনা।

Posted in ইসলাম | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান