একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী উন্নতি এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছলেও কন্যা শিশুর প্রতি মানুষের ধারণা উন্নত হয়নি। মানুষ শিক্ষিত হয়েছে, সভ্য হয়েছে কিন্তু এই ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষের ধারণার পরিবর্তন হয়নি। এখনও কন্যা সন্তানের জন্মে অনেক বাড়িতেই খুশির রোশনাইয়ের বদলে মন খারাপির মেঘ ছেয়ে যায়! যদিও অবস্থা অনেক বদলেছে তবে সেটা যথেষ্ট নয়। পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে বৈষম্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায়। জন্মের সাথে সাথেই বৈষম্য শুরু হয়ে যায়। কন্যা সন্তানের জন্ম হলে আত্মীয় স্বজনরা সান্তনা দিতে থাকে, অনেকে মুখ বেজার করে থাকে। পুত্র সন্তানের জন্মে মিষ্টি বিতরণ হয়, কন্যার ক্ষেত্রে সেটা ফালতু খরচ মনে করা হয়!
যাইহোক, একটা সময় আরবে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে বালিতে পুঁতে দেওয়া হতো। এটা ছিল সাধারন ঘটনা। এটাকে খারাপ ভাবে নেওয়া হতো না। সেরকম সময়ে ইসলাম ঘোষণা দেয় এই কাজ জঘন্য এবং হত্যা। কুরআনে বলা হয়, ”তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয় (কন্যা সন্তান জন্মের ব্যাপারে), তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কতই না নিকৃষ্ট।” [সুরা নাহল/৫৯]। ইসলাম আসার পর এই কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, নারীদের এতটাই অধিকার এবং মর্যাদা দেওয়া হয় যে, কোন এক মনীষী চমৎকার করে বলেছেন, ইসলামের আগে নারীদের মাটিতে পুঁতে দেওয়া হতো আর ইসলাম আসার পরে সেই নারীর পায়ের তলায় জান্নাত করে দেওয়া হলো!
ইসলাম কন্যা সন্তানের জন্মকে বরকতময় বলা হয়েছে। কন্যা সন্তান প্রতিপালন একটা ইবাদত এবং মহৎ কর্ম। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ”যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩]। কন্যা সন্তান প্রতিপালন এমন মহান কাজ যার মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায় এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যদি কন্যার দায়িত্বশীল হয় এরপর তার প্রতি সুন্দর আচরণ করে তাহলে এই কন্যারা তাকে জাহান্নাম থেকে আড়াল করে রাখবে।” [বুখারী ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬২৯, তিরমিযী ১৯১৫, আহমাদ ২৩৫৩৬]
ইসলামে পুত্র এবং কন্যা সন্তানকে সমান ভাবে দেখতে বলা হয়েছে। কাউকে প্রাধান্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর প্রাধান্য দিতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের সমাজে দেখা যায়, পড়াশোনা, সুযোগ সুবিধা এমনকি খাওয়ারের ক্ষেত্রেও কন্যা সন্তানের উপর পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অথচ ইসলামে বলা হয়েছে, চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন পুত্র এবং কন্যা সন্তানের মধ্যে কোন পার্থক্য না করা হয়। একদা, জনৈক আনসারী সাহাবীকে মুহাম্মাদ (সা.) ডাকলেন। ইতিমধ্যে ঐ সাহাবীর এক পুত্র তার কাছে এল। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাও সেখানে উপস্থিত হল। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে মুহাম্মাদ (সা.) বললেন, ‘উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও।’ [মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯/১০০]। সামান্য চুমুর ক্ষেত্রেই যদি বৈষম্য করতে নিষেধ করা হয় তাহলে অন্যান্য বড় ব্যাপারগুলো কতটা নিকৃষ্ট ব্যাপার ভাবুন !