পরনিন্দাকারী ও চুগলখোর জান্নাতে যাবে না


Beauty-of-nature-random-4884759-1280-800শেখ ফরিদ আলম

মসজিদের ইমাম সাহেব কিংবা বিভিন্ন আলেম ওলামার কাছে মাঝে মাঝে শুনে থাকি গীবদকারী ও চুগলখোরদের শাস্তির কথা । আমরা প্রায় সকলেই জানি চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না । যে কাজের শাস্তি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.) সরাসরি জাহান্নাম ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে পরনিন্দা অন্যতম । অথচ, আমরা এই ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্বই দেয় না । যেমন হাদীসে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মানুষ কোন ভ্রুক্ষেপ না করে আল্লাহর অসন্তুষ্টপূর্ণ এমন কতক কথা বলে, যার পরিণাম জাহান্নাম যা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত প্রসারিত’ (বুখারী, মিশকাত – শিষ্টাচার অধ্যায়)। আসলে আমরা নামাজ, রোজা, হজ, দাড়ি, খাত্নাকেই ধর্ম বলে মানি । যত্নের সাথে তা করি । কিন্তু ইসলাম এমন জীবন ব্যবস্থা যা ঘুম থেকে ওঠা থেকে নিয়ে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সকল ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে । যা মানা মুসলিমদের জন্য আবশ্যকীয় ।

     যাইহোক, পরনিন্দা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি । কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে কষ্টকর কিছু বলা, যদিও তা সত্য হয় অর্থাৎ তার মধ্যে তা থাকে সেটাকেই পরনিন্দা বলা হয় । আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে এবং কেউ মিথ্যা বলে তাহলে সেটা হবে অপবাদ । যেমন নবীজী বলেছেন, ‘যখন তুমি তোমার কোন ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলবে যা তার মধ্যে আছে, তবে তুমি তার গীবত (নিন্দা) করলে । আর যখন তুমি তার সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার মধ্যে নেই তাহলে তার প্রতি অপবাদ দিলে’ (মুসলিম, মিশকাত/৪৮২৯) । আর চুগলখোরি হল একের কথা অন্যকে লাগানো । এই পরনিন্দা বা চুগলখোরি কত ভয়ানক তার প্রমান হল এই পাপের তওবা করে ক্ষমা হয় না । যার নিন্দা করা হয়েছে বা যার বিরুদ্ধে চুগলখোরি করা হয়েছে তার কাছেই ক্ষমা নিতে হয় । বড় পাপ দু’ভাগে বিভক্ত । এক, আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা ব্যতীত ক্ষমা হয় না । দুই, মানুষের সাথে সম্পৃক্ত যা তাওবা করে ক্ষমা হয় না বরং মানুষের নিকট ক্ষমা নিতে হয়, আর গীবত এ পাপের অন্তর্ভুক্ত । (কে বড় ক্ষতিগ্রস্ত, আব্দুর রাযযাক; ১৩১ পৃষ্ঠা)

সমালোচনা বা পরনিন্দা কখনও সুখের কিছু বয়ে আনেনা । এটা শুধুই মানুষের মাঝে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে আর ঝামেলা লাগায় । বেশিরভাগ ঝগড়া-ঝামেলার পেছনে এই দুটি জিনিসই থাকে । সুস্থ সমাজের পক্ষে নিন্দা আর চুগলি খুব ভয়ানক দুটি ক্যান্সার । তাই ডেল কার্নেগীও তার বই প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভে সমালোচনা বা পরনিন্দা নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন এবং উদাহরন সহ প্রমান করেছেন সমালোচনা করে কিছুই হাসিল হয় না । সমালোচনা শুধু ক্ষতিই বয়ে আনে । কথায় আছে, হাতের মার থেকে মুখের মার বেশি ক্ষত সৃষ্টি করে । আর সেই কারনেই পরনিন্দাকারী আর চুগলখোরের কথা মানুষ সহজে ভুলে যেতে পারে না ।

এ বিষয়ে কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করলাম –

  • ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক । নিশ্চয়ই কতক ধারণা গুনাহ । আর কারো গোপন দোষ অনুসন্ধান কর না এবং পশ্চাতে নিন্দা করো না । তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভায়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে ? তোমরা একে ঘৃণাই কর’। [সুরা হুজুরাত/১২]

  • হুযায়ফা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) –কে বলতে শুনেছি যে, পরনিন্দাকারী জান্নাতে যাবে না । অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, চুগলখোর জান্নাতে যাবে না । (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৪৮২৩)

  • ‘তোমরা কি জানো! কোন জিনিস মানুষকে সবচাইতে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তা হল আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্র । তোমরা কি জানো! মানুষকে কোন জিনিস সবচাইতে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তা হল দুটি ছিদ্রপথ । একটি মুখ এবং অপরটি লজ্জাস্থান’ । (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত/৪৬২১)

  • ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দ্বিমুখী, ক্বিয়ামাতের দিন তার (মুখে) আগুনের দু’টি জিহ্বা হবের’ । (দারেমী, মিশকাত/৪৬৩৩)

  • ‘তুমি ক্বিয়ামাতের দিন দু’মুখী লোককে সবচেয়ে অনিষ্টপূর্ণ পাবে । যারা এক জায়গায় যা বলে অন্যস্থানে তার উলটা বলে’ । (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৪৮২২)

About সম্পাদক

সম্পাদক - ইসলামের আলো
This entry was posted in অধিকারীর অধিকার, শরিয়াত, সুখী জীবন. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান