একজন মুস্তাক হুসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের শিক্ষিত হওয়া


পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের অবস্থা কেমন তা এতদিন পশ্চিমবঙ্গের বা ভারতের লোকেরা জানত না। এমনকি মুসলিমরা পর্যন্ত জানত না তুলনামুলক ভাবে তারা কেমন আছে, সরকারী ভাবে সাহায্য কেমন পাচ্ছে, শিক্ষিত হার কত, চাকরির % কত ইত্যাদি ইত্যাদি। মনমোহন সিং এর প্রস্তাবে একটি কমিটি গঠন করা হয় সারা ভারতে মুসলিম সহ অনান্য সংখ্যালঘুদের অবস্থা কেমন তা জানার জন্য। বিচারপতি সাচারে নেতৃত্বে গঠিত সাচার কমিটির রিপোর্ট সারা বিশ্বের মানুষকে অবাক করে দেয় কিভাবে একটা নিদিষ্ট ধর্মের লোক বঞ্চিত হয়ে আসছে। শিক্ষা থেকে, চাকরি থেকে, সরকারী সাহায্য থেকে। বঞ্চিত শুধু বঞ্চিত। ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকার দাঙ্গা থেকে তো আমাদের বাঁচিয়েছে কিন্তু অন্য সব ব্যাপারেই শুধু বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চুপ করিয়েছে। কেউ কিছু বললে সাম্প্রদায়িক উপাধি পেয়েছে। যেখানে ৭% চাকরি ছিল সত্তরের দশকে সেখানে ৩৪ বছরে কমে গিয়ে দের % হয়েছে। ইলেক্ট্রিক পুল যেতে যেতে ঠিক মুসলিম পাড়ার সামনে থেমেগেছে। আর ১ কিমি যেতে পারেনি। মুসলিম এলাকায় স্কুল কলেজ কখনোই হয়নি। উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্সিদাবাদ এই তিন জেলায় ৭০-৮০ শতাংসই মুসলিম। তাই কখনোই কোন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি। মালদায় দশ বছর আগে গৌড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ঘোষিত হলেও আজও কোন কাজ হয়নি। যাক এসব নিয়ে লেখার ইচ্ছে নেই মোটেই। কারণ এগুলো লিখলে তো ব্লগ ভরে যাবে, সাচার কমিটির রিপোর্ট্টাই তো সাড়ে বারো হাজার পাতার।
আজ লিখতে চাইছি মুশতাক হুসেন সম্পর্কে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ধনী শিল্পপতি। পতাকা ইন্ডাস্ট্রির মালিক। পতাকা বিড়ি, পতাকা চা, পতাকা বিস্কুট….অনেক প্রডাক্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারত বিখ্যাত। তিনি তাঁর কোম্পানীর জন্য যত না জনপ্রিয় তার থেকে বেশি জনসেবা মুলক কাজের জন্য। কখনো কখনো আশ্চর্য হয় ভেবে, একাই কিভাবে এত সব কাজ করেন তিনি। এক বিশাল সামাজীক সংগঠন তৈরি করেছেন। জি ডি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। এই সোসাইটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গরীব মেয়েদের বিয়ে, মাদ্রাসা-মিশন আরো অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছে।
মোস্তাক হুসেন রামকৃষ্ণ মিশনের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের জন্য তৈরি করেন আল-আমিন মিশন। এই মিশনের বিশাল সাফল্য দেখে এরকম প্রায় ৬০ টিরও বেশি মিশন গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। তিনি প্রায় ৩২ টি মিশনকে বাতসরিক অর্থ সাহায্য করে থাকেন। কয়েক বছর আগে তিনি জি ডি ডায়াবেটিজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সকল মাদ্রাসায় তিনি সাহায্য করেছেন। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গরীব মুসলিমদের জন্য।
এবছর মুর্সিদাবাদ জেলার সব কটি ব্লকে প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। উনার ব্যাপারে এতদিন একটা অভিযোগ ছিল তিনি শুধু সংখ্যালঘুদের জন্যই কাজ করছেন। কিন্তু এই স্কুলে সংখ্যালঘুদের সাথে সাথে অন্যরাও পড়ার সুজোগ পাবেন। ইতিমধ্যে তিনি সরকারী এবং বেসরকারী অনেক পুরুস্কার পেয়েছেন।
আজ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা যেটুকু শিক্ষিত হয়েছে, স্বচ্ছল হয়েছে তার জন্য সরকারের যতটা অবদান আছে তার থেকেও বেশি আছে এই লোকটার। বিশেষ করে মালদা, মুর্সিদাবাদ, বিরভুম, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিন ২৪ পরগণা, হুগলি, বাকুঁরা, কলকাতা, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর জেলায় তিনি অনেক কাজ করেছেন।

About সম্পাদক

সম্পাদক - ইসলামের আলো
This entry was posted in ভারতীয় মুসলিম. Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান